বিশ্ব নবী (সা.) এর ইন্তেকাল
বিশ্ব নবী (সা.) এর ইন্তেকাল
জেনে রাখুন প্রত্যেক জীব
মরণশীল, সুতারাং হে মুমিনগণ! আপনারা মওতের জন্য পূর্ণ প্রস্ততি গ্রহন করুন এবং আল্লাহ
পাকের নিকট খালেছ তওবা করুন এবং মৃত্যু আগমনের পূর্বেই পরকালের জন্য উত্তম পাথেয় সংগ্রহ
করুন। সাবধান মুসলমান না হয়ে আপনারা মৃত্যুবরণ করবেন না। হে আল্লাহর বান্দাগন! মহান
আল্লাহ আপনাদেরকে সৌভাগ্যবান করুন। আমি এখন আপনাদের নিকট মহানবী (সা.) ওফাতের অবস্থা
সম্পর্কে আলোচনা করব। আশাকরি আপনারা তা দ্বারা উপদেশ গ্রহন করবেন। এ সম্পর্কে হযরত
জাফর বিন মুহাম্মদ তার পিতা হতে বর্ননা করেন যে, জনৈক করাইশী ব্যক্তি তার পিতা (মুহাম্মদের
পিতা) আলী ইবনে হুসাইনের নিকট আসল। তখন আলী ইবনে হুসাইন আগত লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
আমি কি তোমার নিকট হযরত রাসূল পাকা (সা.) এর একটি হাদীস বর্ণনা করব? উত্তরে লোকটি বলল,
হ্যাঁ, আপনি আবুল কাসেম (সা.) হতে হাদীস বর্ণনা করুন। তখন আলী ইবনে হুসাইন (মুরসাল
সূত্রে) বললেন, যখন হযরত সাসূলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন হযরত জিব্রাইল (আ.)
তাঁর খেদমতে এসে আরজ করলেন, হে মুহাম্মদ! আপনার বিশেষ সম্মান ও গুণ মর্যাদার প্রেক্ষিতে
আল্লাহ তায়ালা আমাকে আপনার খেদমতে পাঠিয়ে আপনার হাল হাকীকত জানতে চেয়েছেন। অথচ তিনি
আপনার হাল হাকীকত সম্পর্কে আপনার চেয়ে অধিক অবগত আছেন। তা সত্তেও তিনি জানতে চেয়েছেন
আপনি এখন নিজ সম্পর্কে কি রকম অনুভব করছেন? উত্তরে হযরত রাসূলে পাক (সা.) বললেন, হে
জিব্রাঈল! আমি নিজেকে ভারাক্রান্ত পাচ্ছি এবং নিজের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করছি। অত:পর
সেদিন হযরত জিব্রাঈল (আ.) চলে গেলেন। আবার দ্বিতীয় দিন এসে তিনি বিগত দিনের ন্যায় জিজ্ঞেস
করলেন, আর নবী কারীম (সা.) প্রথম দিনের মত উত্তর দিলেন। দ্বিতীয় দিন হযরত জিব্রাইল
(আ.) চলে গেলেন। পূনরায় হযরত জিব্রাইল (আ.) তৃতীয় দিন আগমন করলেন এবং তিনি হযরত নবী
কারীম (সা.) প্রথম দিনের ন্যায় জিজ্ঞেস করেন। আর নবী কারীম (সা.) প্রথম দিনের ন্যায়
একই উত্তর দিলেন। এ তৃতীয় দিনে ছিলেন হযরত জিব্রাঈলের সংগে ইসমাঈল নামের আরেকজন ফেরেশতা।
তিনি ছিলেন এমন একলক্ষ ফেরেশতার সর্দার, যাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন স্বতন্ত্রভাবে একলক্ষ
ফেরেশতার সর্দার। সেই ফেরেশতাও হযরত নবী কারীম (সা.) এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তিনি
হযরত জিব্রাঈলকে তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন এবং প্রবেশের অনুমতি দিলেন অত:পর হযরত জিব্রাঈল
(আ.) বললেন এই যে মালাকুল মাওত আযরাঈর (আ.) তিনিও আপনার নিকট আসার অনুমতি চাইতেছেন।
তিনি আপনার পূর্বে কোন মানুষের নিকট যাওয়ার জন্য কখনো অনুমতি চাননি এবং আপনার পরেও
কখনো কোন মানুষের নিকট যেতে অনুমতি চাইবেন না। অতএব, আপনি তাঁকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান
করুন। তখন হযরত নবী কারীম (সা.) অনুমতি প্রদান করলেন। তখন তিনি হযরত হযরত আযরাঈল (আ.)
হযরত নবী কারীম (সা.) কে সালাম করলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তায়ালা আমাকে
আপনার খেদমতে পাঠিয়েছেন। আপনি যদি আমাকে আপনার রূহ কবজ করার অনুমতি বা নির্দেশ দেন
তাহলে আমি আপনার রূহ কবজ করবো। আর যদি আপনি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন তাহল আমি আপনাকে
ছেড়ে দিব অর্থাৎ আপনার রূহ কবজ করবো না তখন হযরত রাসূলে পাক (সা.) বললেন, হে মালাকুর
মওত! আপনি কি এমনটা করতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এ ভবেই নির্দেশিত হয়েছি। আর
আমি আপনার নির্দেশ মান্য করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। এ সময় হযরত নবী কারীম (সা.) হযরত
জিব্রাঈল (আ.) এর দিকে তাকালেন। তখন হযরত জিব্রাঈল (আ.) বললেন, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ
তায়ালা আপনার সাক্ষাত লাভের জন্য একান্তভাবে উদগ্রীব। তৎক্ষণাৎ হযরত রাসূলে পাক (সা.)
মালাকুল মাউতকে বললেন, যে জন্য আপনি আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই কাজে পরিনত করুন। অত:পর তিনি
রূহ মুবারাখ কবজ করে নিলেন। যখন হযরত রাসূলে পাক (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং শোক প্রকাশের
সময় উপস্থিত হলো তখন তাঁরা (পরিবারের লোকজন) গৃহের একপাশ হতে এ আওয়াজ শুনতে পেলেন,
হে নবী পরিবারের লোকজন! আপনাদের প্রতি আল্লাহ পাকের তরফ হতে শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত
হোক। আল্লাহ পাকের রাস্তায় প্রত্যেক বিপদে রয়েছে শান্তনা ও আনন্দ এবং প্রত্যেক ধ্বংসের
উত্তম বিনিময় আছে, আর প্রত্যেক হারিয়ে যাওয়া বস্তর ক্ষতিপূরণ রয়েছে। সুতরাং তোমার একমাত্র
আল্লাহ পাককেই ভয় কর তাঁর বিধান মান্য করে চল এবং তাঁর মহান দরবারেই সার্বিক কল্যাণ
কামনা কর। কেননা, প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তিই বিপদগ্রস্ত যে মহান আল্লাহর প্রতিদান সওয়াব
হতে বঞ্চিত। অত:পর হযরত আলী (রা.) বললেন, তোমরা কি জান এ শান্তনা বানী প্রদানকারী কে?
ইনি হলেন হযরত খিজির (আ.)। (বায়হাকী শরীফ)
আল্লাহ পাক আমাদেরকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বরকত দান করুন। বিতাড়িত শয়তানের অদিষ্ট
হতে মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য চাচ্ছি। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনি মরনশীল এবং তারাও মরণশীল।
অত:পর তোমরা সকলেই কিয়ামতের দিন তোমাদের মহান প্রভুরই নিকট উপস্থিত হয়ে পরস্পরে বাকবিতন্ডা
করবে। (আল কুরআন)
আরও পড়ুন
No comments
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য আমাদের জানান। এখানে আপনার মন্তব্য করুন