বিশ্ব নবীর বৈশিষ্ট্য ও মু’জিযা
বিশ্ব নবীর বৈশিষ্ট্য ও
মু’জিযা
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)
এর অসংখ্য ও অগনিত বৈশিষ্ট্য ও মু’জিযা রয়েছে যার মধ্যে হতে কিছু বৈশিষ্ট্য ও মু’জিযা
তুলে ধরা হলো। জেনে রাখুন, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবকে অগনিত মু’জিযা তথা অলৌকিক
নিদর্শনাবলী দ্বারা সাহায্য করেছেনে, যেগুলো তাঁর নবুয়্যত ও রিসালাতের সত্যতার উপর
জ্বলন্ত প্রমান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মু’জিযা সমূহের মধ্যে সর্বশেষ্ঠ মু’জিযা
হলো ‘‘আল কুরআন’’ যা মহাবিজ্ঞানময় এবং যা দিয়ে মহান আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানব
দানবের সাথে উহার যে কোন একটি সূরার ন্যায় সূরা তৈরী করে চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান করেছেন।
কিন্তু দুনিয়ার কেহই অদ্যাবধি উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি এবং উহার একটি
ছোট্ট সূরার ন্যায় সূরা রচনা করতে পারেনি। বস্তত: বিশ্ববাসী তাতে কখনো সক্ষম হবে না
যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে এ কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করে। বিশ্বনবীর মু’জিযা সমূহের মধ্যে
সবচেয়ে অধিক প্রসিদ্ধ মু’জিযাগুলোর একটি হলো তাঁর হাতের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত
হওয়া, যখন কাফেরগন এর দাবী উত্থাপন করেছিল। এ ঘটনা বিভিন্ন অকাট্য হাদীস দ্বারা সন্দেহাতীতরূপে
সাব্যস্ত। অনুরূপ আরেকটি মু’জিযা যা হযরত আনাস (রা.) হতে বর্নিত, তিনি বলেন- হযরত আব্দুল্লাহ
বিন সালাম হযরত রাসূলে পাক (সা.) এর মদীনায় আগমনের সংবাদ জানতে পেলেন, এ সময় তিনি নিজস্ব
একটি বাগানে খেজুর পাড়ছিলেন। অত:পর তিনি হুজুর (সা.) এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, আমি
আপনাকে এমন তিনটি প্রশ্ন করবো যার উত্তর নবী ব্যতীত আর কেহই জানে না। (এক) কিয়ামতের
সর্বপ্রথম আলামত কি? (দুই) বেহেশত বাসীদের সর্বপ্রথম খাদ্য কি? (তিন) কিসের কারনে সন্তান
(আকৃতিতে) কখনো তার পিতার অনুরূপ হয়, আবার কখনো তার মায়ের অনুরূপ হয়? নবী কারীম (সা.)
বললেন- এ বিষয়গুলো সম্পর্কে হয়রত জিব্রাইল (আ.) এই মাত্র আমাকে অবহিত করে গেলেন। কিয়ামতের
সর্বপ্রথম আলামত হলো একটি অগ্নিকুন্ড যা লেকদেরকে পূর্ব হতে পশ্চিম দিকে একত্রিত করবে।
আর জন্নাতবাসীগন সর্বপ্রথম যে খাদ্য ভক্ষন করবে তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অং। আর
সন্তানের ব্যাপারটা হলো যদি স্ত্রীর বীর্যের আগে স্বামীর বীর্যের স্খলণ ঘটে তাহলে সন্তান
বাপের আকৃতি ধারন করে। পক্ষন্তরে স্ত্রীর বীর্য যদি স্বামীর বির্যের আগে স্খলণ ঘটে
তাহলে সন্তান মায়ের আকৃতি ধারন করে। এতদশ্রবনে হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম বরে উঠলেন,
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহ পাকের
রাসূল। (বুখারী শরীফ) হে ঈমানদারগণ! জেনে রাখুন, আমাদের নবী কারীম (সা.) এমন কতিপয়
বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা তিনি সকল নবী ও রাসূল হতে স্বতন্ত্র ছিলেন। বিশ্বনবীর
বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে হতে একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, মাহান আল্লাহ তাঁকে মাকারেমে আখলাক
তথা মহৎ গুণাবলী ও চারিত্রিক মাধুর্য দান করেছেন যা অন্য কারো ভাগ্যে জুটেনি। এরশাদ
হচ্ছে হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্র ও অনুপম সৎ গুনাবলীর উপর সু-প্রতিষ্ঠিত।
আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- যা হযরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত রাসূলে পাক
(সা.) এরশাদ করেন, আমাকে পাঁচটি বস্ত দেয়া হয়েছে, যেগুলো ইতিপূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি।
(এক) এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত প্রভাব ও প্রতিপত্তি দিয়ে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
(দুই) গোটা যমীনের পৃষ্ঠদেশ আমার উম্মতের জন্য মসজিদ ও পবিত্র ঘোষনা করা হয়েছে। সুতারাং
আমার উম্মতের যে কেহ যেখানেই নামাযের সময় পাবে সে যেন সেখানে নামায আদায় করে নেয়। (তিন)
আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করা হয়েছে, অথচ আমার পূর্কে কোন জাতির জন্য উহা হালাল
করা হয়নি। (চার) আমাকে শাফায়াতের অধিকার দেয়া হয়েছে। (পাঁচ) পূর্বেকার নবীকে কেবল তার
সম্প্রদায়ের দেহায়েতের জন্য পাঠন হতো, কিন্তু আমাকে দুণিয়ার সকল মানব-দানবের হেদায়েতের
জন্য পাঠানো হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ) মাহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বৈশিষ্ট্যগুলোর
মধ্যে আরো হলো এই যে, তাকে জাওয়ামেউর কালেম (ভাষা স্বল্প কিন্তু অর্থ ও মর্ম ব্যাপক)
দেয়া হয়েছে, তাকে খাতামুন নাবিয়্যিন ঘোষনা করা হয়েছে। জমীনের সম্পদসমূহের চাবিকাঠি
তাঁর নিকট সোপর্দ করা হয়েছে এবং হাউজে কাওছার দেয়া হয়েছে। তিনি কাওকে জীবনে অভিশাপ
করেননি, কেননা, তিনি হলেন রাহমাতুললিল আলামীন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে মহাগ্রন্থ
কুরআনের বরকত দান করুক, বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট হতে আল্লাহ পাকের সাহায্য প্রার্থনা
করছি।
No comments
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য আমাদের জানান। এখানে আপনার মন্তব্য করুন