মায়ের ভালবাসার কাছে সব কিছু হার মানে
মায়ের ভালবাসার কাছে সব কিছু হার মানে
হটাৎ মা ফোন দিয়ে বলল বাবা আসার সময় পারলে কয়টা টেংরা মাছ নিয়া আসিস একটু ঝোল করব, অনেক দিন হল খাইনা।
মার ফোনটা রেখে পকেটে হাত দিলাম পকেটে অল্পকিছু টাকা আছে।
মাথাটা একটু গরম ছিল কারণ একটু আগেই মিতুর সাথে ঝগড় হল, গতমাসের বেতনের টাকা সবই তো মিতুরে দিলাম, শুধু মার চিকিৎসার জন্য তিনহাজার টাকা মার হাতে দিছিলাম আর আমার হাত খরচের জন্য সামান্য টাকা রাখছিলাম। তবুও এতো টাকা কি করে ও? মিতু আমার সব
ও যখন যা চায় তাই দেই,কারণ ওরে যে বড্ড ভালবাসি।
ছোট্ট একটা জব করি, বাবা মারা যাবার পর মা ই খেয়ে না খেয়ে মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন কখনো কষ্ট অনুভব করতে দেন নি। এখন মায়ের বয়স হয়েছে কাজ কাম করতে পারেন না তেমন।
আমার বেতন দিয়েই কোনমতে মা-ছেলের ফ্যামিলিটা চলে
যাক অফিস থেকে বাজারের দিকে রওয়ানা হলাম, এর মধ্যে মিতুর ফোন,
মিতু: শোনো কাল দেখা করবা আর আমার পাঁচ হাজার টাকা লাগবে, নিয়া আসবা। আর একটু সাজুগুজু করে আইবা আমার বান্ধুবীরা আসবে আমরা কোনো রেস্টুরেন্ট এ লান্স করব।
আমি বললাম দেখ গতমাসের টাকাটা সবই তো তোমারে দিলাম। আর এতো টাকা দিয়ে তুমি কিইবা করবা? মাস প্রায় শেষ আমার হাতে তো তেমন টাকাও নেই।
বলতে নাবলতেই মিতু রেগে শেষ কি?! তুমি টাকা দিয়ে খোটা দাও আমি টাকা দিয়ে কি করব তা হিসাব দিতে হবে তোমার কাছে? তুমি জানোনা? আমি ভার্সিটিতে পড়ি,কত টাকা লাগে আমার, আমার বান্ধুবীদের কত দামি দামি গিফট দেও, ওদের বয়ফ্রন্ড আর তুমি সামান্য কিছু টাকার জন্য খোটা দেও??
আমি : আরে না না এমনি বললাম সোনা,, আমি নিয়া আসব কাল চিন্তা করনা বলে ফোন কেটে দিলাম
মিতুরে যে টাকা দিছি আজ পর্যন্ত তাতে ছোটখাট একটা ঘর করা যেতো তবুও কখনো কোন আপত্বি জানাইনি কারণ ওরে বড্ড ভালবাসি, ওরে ছাড়া আমার বাচা অসম্ভব, ওই আমার জিবন, নাহ ওরে ছাড়তে পারবনা যে করে হোক টাকা ম্যনেজ করতে হবে।
মাছ না কিনে বাসায় চলে আসলাম মাকে বললাম, টেংরা মাছ পাইনি অন্য একদিন আনব
মা বলল থাক বাবা, লাগবেনা হাত মুখ ধুয়ে আয় যা রানছি তাতেই হবে
খেয়ে দেয়ে চিন্তা করতে লাগলাম টাকা কই পাওয়া যায়
মাকে বললাম মা তোমায় যে তোমায় যে ডাক্তারের জন্য টাকা দিছিলাম কিছু তা কি খরচ করে ফেলেছ?
মা: না বাবা কাল যাব ভাবছি তোর সময় হলে একটু নিয়া যাস বাবা
আমি: না মা কাল সময় হবেনা অফিসে বড় একটা কাজ আছে আর আমার কিছু টাকাও লাগবে কোথাও যোগার করতে পারছিনা
একটু পরে দেখি মা আমার হাতে চার হাজার টাকা এনে দিল, বলল বাবা তুই ভাল থাকলে আমি বহুত ডাক্তার দেখাতে পারব। ধর বাবা তুই 3 হাজার দিছিল আমার কাছে এক হাজার ছিল, এই নে তুই তোর কাজ আগে কর,। আমি ভাল আছি আমায় অন্য একদিন নিয়া যাস
মনে মনে খুব খুশি হলাম যাক টাকাটা যোগার হল
খুশি মনে শুয়ে পরলাম একটু পর মার কণ্ঠ শুনতে পেলাম ফোনে কাউকে বলতেছে, কালকে আমার সিরিয়ালটা বাদ দিয়ে দেন আমি কাল আসতে পারবনা কাজ আছে, বুঝতে বাকি রইল না, হয়তো মা আজ ডাক্তার কে সিরিয়ালের কথা বলছিলো।
ওপাশ থেকে ডাক্তার বলল আন্টি আপনার শরির তো অনেক খারাপ খুব দ্রুত ট্রিটমেন্ট করা দরকার, আম্মু বলল না আমি ঠিক আছি অন্যদিন আসতে পারলে জানাব সকাল সকাল উঠে সেজে গুজে পাঞ্জাবী পরে রওয়ানা দিলাম
পার্কে গিয়ে দেখি মিতু আর ওর বান্ধুবীরা মিলে হাসাহাসি করতেছে। আমায় দেখেই মিতুর মাথা গরম হয়ে গেল বলল কিসব পাঞ্জাবী টাঞ্জাবী পরে আসছ? ক্ষেতের মত লাগে সেজেগুজে আসতে বললাম না?
আমার মানসম্মান রাখলা কিছু এভাবে হলে সম্পর্ক রাখা যাবেনা। সবাই খিটখিট করে হাসতে লাগল।
বলল টাকা আনছ? আমি : হ্যা
মিতু : দাও আর চল পাশেই একটা ভাল রেস্টুরেন্ট আছে ওটাতে লান্স করব, ওর বান্ধুবীদের ডাক দিল বুঝাই যাচ্ছে সবাইকে খাওয়ানের প্রস্তুতি করে আনছে আর ওরাও খাওনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছে
ওরা হাটা শুরু করল আমি বললাম দাড়াও, ধাপ করে মিতুর গালি একটা চড় বসিয়ে দিলাম
বললাম তোর মত লোভি মেয়ে যেন আমার ত্রি-শিমানায় না দেখি।
ভালবাসার নাম করে যারা টাকা হাতিয়ে নেয় তারা ভালবাসার যোগ্য না ( কারণ ইতিমধ্যে আমি জেনে গেছিলাম মিতুর আরো কয়েকটা ছেলের সাথে সম্পর্ক)
এ বলে চলে আসলাম, সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছিল
সোজা বাসায় চলে গেলাম মাকে বললাম মা তুমি বের হও আজ তোমায় নিয়ে ঘুরব
মা বলল বাবা তোর মাথা ঠিক আছে? আমি এই বয়সে ঘুরব? আমি বললাম যা বলছি তা কর মিতুর কাছে পাঞ্জাবী পছন্দ না জানি, কিন্ত আমার মায়ের কাছে খুব পছন্দ আম্মুই এটা পছন্দ করে কিনেদিছিল কিন্তু কখনো আম্মুর সামনে পরা হয়নি
মাকে নিয়ে সোজা চলে গেলাম মার্কেটে মার জন্য দুটো শাড়ি আর আমার জন্য একটা পাঞ্জাবী আরো টুকটাক কেনাকাটা করলাম, মা বলল এসব কি দরকার বাবা আমি বললাম চুপ করো, অনেকদিন ধরে দেখছি একই শাড়ি বারবার পরতেছো
তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আম্মুকে নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে আগেই বলে রাখছিলাম ডাক্তারকে
মাকে ডাক্তার দেখিয়ে, টেংরা মাছ কিনে বাসায় আসলাম
মা রান্না করছিল আর তার মুখে ছিলো হাজারো মুক্তজড়ানো হাসি, চেহারায় ছিল সুখের ছায়া সত্যিই বাবা মারা যাবার পর আজ প্রথম মাকে এতো হ্যাপি দেখলাম
রাতে একসাথে খেলাম
আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পরলাম নিজের কাছে এতোটা আনন্দ লাগছিল ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়
ভাল লাগলে, জানাবেন।
কোথাও ভুল হলে জানাবেন উপকৃত হব
নেক্সট গল্পের জন্য, সাথেই থাকুন।
মা সে তো এক অবিরাম ভালোবাসার নাম i love u ma
ReplyDeleteহ্যাঁ ঠিক বলছেন, ধন্যবাদ ভাই
Deleteosadaron akta laka
ReplyDelete